সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সূর্য আর পৃথিবীর দূরত্ব কিভাবে মাপলেন?

 সত্যিই তোহ, এত বিশাল দুরত্বে থাকা দুইটা বস্তুর মধ্যকার দূরত্ব কিভাবে বের করা যায়? যত কঠিনই হোক না কেনো বিজ্ঞান কিন্তু একটা না একটা উপাইয় ঠিকই বের করে ফেলে। তো একটু জেনে নেই যে বিজ্ঞান এই কাজটা কিভাবে সম্ভব করলো।

দূরের গ্রহ নক্ষত্রের দূরত্ব বোঝাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ‘আলোক বর্ষ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। সৌরজগতের বাইরে মহাকাশের বস্তুগুলোর দূরত্ব মাপতে সাধারণ কিলোমিটার একক ব্যবহার করা সুবিধাজনক নয়। এত বিশাল দূরত্ব পরিমাপ করতে ‘আলোক বর্ষ’ নামক বিশেষ এই এককটি ব্যবহার করা হয়। আলোক বর্ষের (Light year) বিশালত্ব মানুষের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার। আলো যদি এই বেগে টানা এক বছর ভ্রমণ করে, তাহলে যে দূরত্ব অতিক্রম করবে, তাকে বলে এক আলোক বর্ষ। কিলোমিটারের মাধ্যমে আলোক বর্ষকে প্রকাশ করলে দাঁড়াবে, এক আলোক বর্ষ সমান ৯ মিলিয়ন মিলিয়ন কিলোমিটার (৯×১০^১২ কিলোমিটার)। আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টারির দূরত্ব ৪.২ আলোক বর্ষ। দূরের গ্যালাক্সিগুলো শত শত কিংবা হাজার হাজার আলোক বর্ষ পর্যন্ত দূরে অবস্থান করে। এত বিশাল দূরত্ব মাপার কৌশলটা কী?

অনেক কঠিন হলেও কিন্তু খুব সহজেই এই কাজটা করা যায়। তুলনামূলক নিকটবর্তী গ্রহ গুলোর দূরত্ব মাপতে "প্যারালাক্স" পদ্ধতি ব্যাহার করা হয়ে থাকে। এটি আসলে খুবই সহজ একটা ট্রিক।

প্রথমে হাতের একটা আঙ্গুলকে চোখের সামনে ধরতে হবে, এরপর বাম চোখ বন্ধ করে শুধু ডান চোখ দিয়ে আঙ্গুলকে দেখতে হবে। আবার ডান চোখ বন্ধ করে শুধু বাম চোখ দিয়ে দেখতে হবে। এভাবে কয়েকবার ডান-বাম করতে থাকলে দেখা যাবে যে আঙুলটি এদিক ওদিক সরে যাচ্ছে । কিন্তু আঙ্গুলটি কিন্তু একই স্থানে আছে, চোখের ভিন্নতার কারনেই এরুপ পরিবর্তন হয়। নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন।


আঙ্গুলকে চোখের আরো কাছে নিয়ে আসলে এর নাড়াচাড়া বেড়ে যাবে। আবার যদি আঙ্গুলকে কাছে না এনে আরোও দূরে সরানো হয় তাহলে আঙ্গুলের নাড়াচাড়া কমে যাবে। তাহলে এটা বুঝা যাচ্ছে যে, দুই চোখের দুই ভিন্ন অবস্থানের কারনে নাড়াচাড়ার পরিবর্তন কমবেশি হচ্ছে। আঙ্গুল কাছে আনলে এর নাড়াচাড়া বেড়ে যায় আর দূরে নিয়ে গেলে নাড়াচাড়া কমে যায়।যদি কোনভাবে দুই চোখের পারস্পারিক দূরত্ব আর লক্ষ্যবস্তুর বিচ্যুতি হওয়ার পরিমাণ বের করতে পারি তাহলে খুব সহজেই ত্রিকোণমিতির সূত্র প্রয়োগ করে লক্ষ্য বস্তু ঠিক কতটা দূরে আছে তা বের করতে পারব। নক্ষত্রদের বেলাতেও ঠিক একি পদ্ধতি ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।

কিন্তু নক্ষত্রগুলো এতই দূরে যে আঙ্গুলের সাহায্যে এর পরিবর্তন কোন ভাবেই বুঝা সম্ভব হয় না। এজন্য যেটা করতে হবে, আমাদের চোককে একটির থেকে আরেকটির দূরত্ব রাখতে হবে মিলিয়ন কি.মি. দূরে। কিন্ত এটা কোনভাবেই আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আর এজন্য বিজ্ঞানিরা এক অসাধারণ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর কক্ষপথের ব্যাস ১৮৬ মিলিয়ন মাইল। আজকে পৃথিবী কক্ষপথের যে অবস্থানে আছে এবং ঠিক ছয় মাস পরে যে অবস্থানে থাকবে তাদের পারস্পরিক দূরত্ব হবে ১৮৬ মাইল। এটি মোটামুটি যথেষ্ট লম্বা দূরত্ব। এত পরিমাণ দূরত্বে দূরবর্তী নক্ষত্রের প্যারালাক্স অনায়াসেই শনাক্ত করা যাবে।
কক্ষপথের কোনো অবস্থান থেকে নক্ষত্রের অবস্থানের মাপ নিয়ে, ছয় মাস পর আবারো ঐ নক্ষত্রের মাপ নিলে প্যারালাক্স পদ্ধতির মাধ্যমে তার দূরত্ব নির্ণয় করা যাবে। এখানে যেহেতু ছয় মাস আগে ও ছয় মাস পরে পৃথিবীর দুই অবস্থানের দূরত্ব জানা আছে এবং নক্ষত্রের অবস্থান চ্যুতি জানা আছে, তাই ত্রিকোণমিতির সূত্রের মাধ্যমে এখান থেকে নক্ষত্রের দূরত্ব বের করা সম্ভব হবে।


কিন্ত জীবন তো আর সবসময় এত সুন্দর থাকে না। এই পদ্ধতিটি মানতেই হবে অসাধারণ। কিন্তু এটা কেবল মাত্র নিকটবর্তী গ্রহ-নক্ষত্র দের বেলায় সম্ভব হয়ে থাকে। কিন্ত বিজ্ঞানিরা একটি গ্যালাক্সি থেকে অন্য গ্যালাক্সির দূরত্বও বের করে ফেলেন। সেই ক্ষেত্রে তারা তারকার উজ্জলতার উপর ভিত্তি করে এই দূরত্ব পরিমাপ করে। খুবই সুন্দর, উজ্জলতার মাধ্যমে। কিন্তু এটা যে কতটা ঝামেলার তা একটু বলছি।
তারকাদের উজ্জলতা কিন্তু তাদের ভর আর আকারের উপর নির্ভর করে থাকে। আকার আর ভর জানলেও সমস্যা এখনও রয়ে আছে। যদি কোন আধিক উজ্জ্বল নক্ষত্র আমাদের থেকে অনেক দূরে থাকে আর তার থেকে কম উজ্জল নক্ষত্র যদি কাছে থাকে তাহলে দূরত্বের কারনে কম উজ্জ্বল নক্ষত্রাটি বেশি উজ্জ্বল দেখাবে। এটা ভীষণ ঝামেলার। কিন্তু এর থেকেও পরিত্রাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা এর জন্য কিছু প্রমাণ নক্ষত্র ব্যবহার করে থাকে। আর সৌভাগ্য ক্রমে বিজ্ঞানীরা এই প্রমাণ নক্ষত্রও বের করতে পারেন। আর এখান থেকে তারা বিশেষ কিছু সূত্র ব্যবহার করে দূরত্ব বের করেন।

আসলেই যত কঠিন কিছুই হোক না কেনে বিজ্ঞান কিন্তু একটা না একটা উপায় ঠিকই বের করে ফেলে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কলম্বাসের বর্ণনা থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে রহস্যময় জলপরীর (mermaid) প্রমান পাওয়া গেছে, এই বিষয়ে আপনার মতামত কী?

  9 জানুয়ারী ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর সবচেয়ে মহান অনুসন্ধানকারীর মধ্য একজন খ্রিস্টোফার কলম্বাস, তার ডাইরিতে Mermaid-র কথা উল্লেখ করেন, যা পুরো পৃথিবীকে হয়রান করে দিয়েছে। কলম্বাস তার ডাইরিতে ভ্রমণের সমস্ত কাহিনী লিখতেন, কিন্তু তার মতে ৯ জানুয়ারী ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে (ডোমিনিকান রিপাবলিক থেকে ফেরার সময়) সাগরের মধ্য ৩ মার্মিডকে সাঁতার কাটতে দেখেছেন। তার বর্ণনা অনুসারে ৩ জীব জলের উপর ধীরে ধীরে সাঁতার কাটছে , তাদের নিচের শরীর মাছের লেজের মতো আর উপরে এক মানষের মতো। কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন যেমনটা ইতিহাস মার্মিডকে বর্ণনা (সুন্দরী মস্যকন্যা) করেছে এটা ঠিক তার বিপরীত, একদম দানবের মতো দেখতে। শরীর অনেক ভয়ানক। কলম্বাস এক মহান অনুসন্ধানকারী ছিলেন যিনি আমেরিকার মতন এক মহাদ্বীপের খোঁজ করেছেন। যার জন্য তার এই ডাইরির বর্ণনাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবে নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছেন কলোম্বাস হয়তো কিছু জীবকে দেখেছেন কিন্তু ওটা মার্মিড ছিল না, হয়তো জলের ভিতর বসবাসকারী ম্যামলস মন্টিস হতে পারে। মন্টিসের চোখ মানুষের মতো দেখতে, লেজ ঠিক মার্মিড-র মতো দেখতে জীবের মতো। যদি এই সামুদ্রিক জীবকে যদি দূর থেকে দেখা ...

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি পদার্থের নাম কী এবং এটি কি কাজে ব্যবহৃত হয় ?

Periodic Tableএর শেষে যে পদার্থগুলো দেখতে পাওয়া যায়, তা সবগুলই দামি। এর কারণ হলো, ওই পদার্থগুলো মনুষ্য-তৈরি বা man-made। আবার ওগুলো তৈরি করতে যে পরিমান শ্রম, সময়, অর্থ ব্যয় করতে হয় সেই তুলনাই তারা অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এরা এতটাই ক্ষণস্থায়ী যে, রসায়নবিদরাই এদের উপর ভালো ভাবে পরিক্ষা নিরীক্ষা চালাতে পারে না। যা হোক। ওগুলো বাদ দিয়ে যদি বলেন যে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় এমন উপাদানগুলোর মাঝে সবচেয়ে দামি কোনটা, তাহলে নিঃসন্দেহে সেটা হবে  ফ্রান্সিয়াম(Francium)।  Periodic Table এর  Group 1, Period 7 এর 87 Atomic Number  বিশিষ্ট মৌলটি হলো ফ্রান্সিয়াম। প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া গেলেও এর স্থায়িত্ব এত কম যে এদের দাম  গ্রামপ্রতি ১০০ কোটি মার্কিন ডলার  নির্ধারণ করতেও কার্পণ্য করেনি বিজ্ঞানিরা। এটি তেজষ্ক্রিয়এবং এর অর্ধায়ুকাল কেবল ২২ মিনিট। এটি এতটাই ক্ষণস্থায়ী যে এটিকে কখনোই ১ গ্রাম পাওয়া যায়নি। এমনকি এটি কে তৈরি করেও না। ফ্রান্সিয়াম এত ক্ষণস্থায়ী হওয়ার দরুন ফ্রান্সিয়ামকে কোন কাজে লাগানো হয় না। এখন যদি বলেন, ভাই, এমন কোন পদার্থ এর নাম বলুন যা ক্ষণস্থায়ী নয়, যা আপনি আমি সবাই দেখতে...

জীবনের পাঠ মানুষ খুব দেরিতে শেখে || jiboner part manus khob dare te sekhe

জীবনের পাঠ মানুষ খুব দেরিতে শেখে আমাদের জীবনে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যা আমাদেরকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয় এবং আমাদের ব্যক্তিত্বকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দেয়। ঠিক তেমনি কিছু জিনিস আছে যা আমরা সময়মতো শিখি না, এবং যখন আমরা বুঝতে পারি, সময় চলে গেছে এবং আমরা অনেক কষ্ট পাই। এখানে আমরা এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি যেগুলো যদি সময়মতো শেখা যায় তাহলে আমাদেরকে কষ্ট থেকে বাঁচাতে পারে। 1- সবকিছুই অস্থায়ী আপনাকে প্রথম যে জিনিসটি শিখতে হবে তা হল যে ব্যক্তিত্ব বা আশীর্বাদ আপনার জীবনে স্থায়ী নয়। যখন আপনি এটি বুঝতে পারেন, আপনি মানুষকে আপনার জীবনে থাকতে বাধ্য করা বন্ধ করেন এবং যে ব্যক্তিকে ছেড়ে যেতে চায় তাকে ছেড়ে চলে যান, আপনি আর কোনো সম্পর্ককে জোর করবেন না। এটি আপনাকে মানসিকভাবে খুব শক্তিশালী করে তোলে কারণ আপনি যখন মানুষকে আপনার জীবনে থাকতে বাধ্য করা বন্ধ করেন তখন অন্য কেউ আপনাকে সুখী বা দুঃখ দিতে পারে না। তুমি তোমার সুখ দুঃখের একমাত্র কারণ হয়ে যাও। সংক্ষেপে, আপনি একজন অটোফাইল হয়ে যান। 2- জীবন ন্যায্য নয় দ্বিতীয়ত, আপনাকে শোষণ করতে হবে যে কাউকে একটি নিখুঁত জীবন দেওয়া হয় না, আপন...