ভারত কি কখনো বাংলাদেশ দখল করবে??
যুদ্ধ কিংবা রাষ্ট্র দখলের মূল উদ্দেশ্যই থাকে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন। রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে না পারলে সামরিক বিজয়ে লাভ নেই।
যেমন : ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল - " চীন প্রভাবিত কমিউনিস্ট সরকারের পুরোপুরি পতন ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত সরকারকে ক্ষমতায় বসানো "
যুদ্ধে মার্কিনীরা সামরিক বিজয়ে এগিয়ে থাকলেও রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। বিধায় ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিনীরা কৌশলগত ভাবে পরাজিত...
একইভাবে, আফগানিস্তান যুদ্ধে মার্কিনীদের রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল - "তালেবান সরকারকে পুরোপুরি পতন করে মার্কিন অনুগত নর্দান এলায়েন্সকে কিংবা অন্যকোন শক্তিকে পুরো আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসানো "
কিন্তু তালেবানকে পুরোপুরি পতন করানো যায়নি, ৬০-৭০ % ভূমি এখনো তাদের দখলে। এই সময়ে এসে মার্কিনীরা চাচ্ছে পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় তালেবানদের সাথে চুক্তি করে চ্যাপ্টার ক্লজ করতে। এই চুক্তিটাই এখন মার্কিনীদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের কৌশল.....
এরআগে আসি, ইংরেজ শাসনের পর্যালোচনায়..
১৭৫০ এর দিকে ইংরেজদের সাথে ফরাসি, ডাচ, পর্তুগীজ ও স্পেনীশদের বাণিজ্যযুদ্ধ চলছিলো।
ইংরেজদের প্রয়োজন ছিল বিনাশুল্কে শিল্পের কাঁচামাল ; যেমন : পাট, তুলা, নীল, চা, তেল, খাদ্যশস্য ইত্যাদি সংগ্রহ করে শিল্পজাতের মাধ্যমে এদেশসহ সারাবিশ্বে উৎপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা.....
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী যখন শুল্কমুক্ত অনুপ্রবেশ ও অধিক মুনাফা অর্জনে বাধা অনুভব করলো, ঠিক তখনি তারা এদেশকে দখল করে নিয়েছে।
জমির খাজনার প্রতি ইংরেজদের প্রধান নজর ছিল না। খাজনার ভাগ দিয়ে তারা এদেশীয় জমিদার -উচ্চবিত্তদের অনুগত করে রেখেছিল আর বাকিভাগ দিয়ে এদেশীয় আইন-আদালত, প্রশাসন, রেলওয়ে অবকাঠামো, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়তে ব্যয় করেছে।
এদেশ দখলে ইংরেজদের রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ মনোপলি , অর্থাৎ কেবল ইংরেজদেরই একচেটিয়া বাণিজ্যের সুযোগ ও শিল্পের কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং ফরাসিসহ অন্যান্য প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে থাকা
ভারতের কি এমন কোন রাজনৈতিক লক্ষ্য আছে?
সেভেন সিস্টারস এর অখন্ডতা :
বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাতটি প্রদেশ , এ সাতটি প্রদেশ ভারত পেয়েছে ব্রিটিশ ভারতীয় উত্তরাধিকার সূত্রে। ব্রিটিশদের পূর্বে এই সাতটি প্রদেশ কখনো ভারতের মূলধারার সঙ্গে মিশেনি। মৌর্য, গুপ্ত, সুলতানী, মুঘল কোন আমলেই সাতটি প্রদেশ কখনো পুরোপুরি ভারতীয় সংস্কৃতির মূলধারার সাথে মিশেনি।
এ সাতটি প্রদেশের অধিকাংশ মানুষ ভূট-তিব্বতীয় কিংবা মঙ্গোলয়েড উপজাতি। ধর্মে খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ নয়তো প্রকৃতিপূজারী। হিন্দি-বাংলা ভাষাভাষীরা এখানে সংখ্যালঘু
ব্রিটিশরা বুঝেছিল, এ অঞ্চলটি ভারতকে না দিয়ে গেলে, পুরো অঞ্চলটি চীনের পকেটে ঘুরে যাবে যা ইংরেজদের স্বার্থের সাথে বেশী সাংঘর্ষিক।
পঞ্চগড়-দার্জিলিং করিডোর বা চিকেন নেক ছাড়া সেভেন সিস্টারস এর সাথে ভারতের কোন ভৌগলিক সংযোগ নেই, না জলে না স্থলে....
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের ট্রানজিট ও ফেনী করিডোর দিয়ে চট্টগ্রাম-আগরতলা বন্দর ব্যবহার প্রয়োজন
ক. ভারত ইতিপূর্বে শুল্কমুক্ত ট্রানজিট পেয়েছে
খ. আগরতলা বিমানবন্দর করার জন্য জায়গা চেয়েছে
গ. সোনাদিয়ায় চীন প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প বন্ধ করেছে
ঘ. ভবিষ্যতে ভারত চট্টগ্রাম বন্দরকে অবাধ ব্যবহার করার সু্যোগ চাইবে
ঙ. ত্রিপুরার ইন্ডিজেনাস চাকমাদের দিয়ে ভারত পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পেয়ে গেলে সেভেন সিস্টারস সমুদ্রের রাস্তা পেয়ে যাবে
বাংলাদেশের বিশাল পণ্য ও কাঁচামালের বাজার :
ভারতীয় পণ্যের, পর্যটন-চিকিৎসা সেবার অন্যতম বাজার হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে রয়েছে ভারতীয়দের অবাধ বিনিয়োগ। প্রায় ১০ লক্ষ বৈধ-অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী বাংলাদেশে কর্মরত। বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম রেমিটেন্সের উৎস।
টেরোরিজম ও মিলিট্যান্সী :
ভারত চায়, বাংলাদেশের ভেতরে যাতে ভারতীয় জঙ্গী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আশ্রয় ও অস্ত্র সাহায্য না পায়। চীনের সাপ্লাই করা দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার পরে ভারত এ বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছে। উলফার কমান্ডার অনুপ চেটিয়াকে গ্রেফতার করে ভারতের হাতে তুলে দিয়ে বাংলাদেশ ভারতের বিশ্বাস অর্জন করেছে
..
ভারত কি কখনো বাংলাদেশ দখল করবে??
যুদ্ধ কিংবা রাষ্ট্র দখলের মূল উদ্দেশ্যই থাকে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন। রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে না পারলে সামরিক বিজয়ে লাভ নেই।
যেমন : ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল - " চীন প্রভাবিত কমিউনিস্ট সরকারের পুরোপুরি পতন ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত সরকারকে ক্ষমতায় বসানো "
যুদ্ধে মার্কিনীরা সামরিক বিজয়ে এগিয়ে থাকলেও রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। বিধায় ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিনীরা কৌশলগত ভাবে পরাজিত...
একইভাবে, আফগানিস্তান যুদ্ধে মার্কিনীদের রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল - "তালেবান সরকারকে পুরোপুরি পতন করে মার্কিন অনুগত নর্দান এলায়েন্সকে কিংবা অন্যকোন শক্তিকে পুরো আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসানো "
কিন্তু তালেবানকে পুরোপুরি পতন করানো যায়নি, ৬০-৭০ % ভূমি এখনো তাদের দখলে। এই সময়ে এসে মার্কিনীরা চাচ্ছে পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় তালেবানদের সাথে চুক্তি করে চ্যাপ্টার ক্লজ করতে। এই চুক্তিটাই এখন মার্কিনীদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের কৌশল.....
পুরো লেখাটিতে আমি দেখাবো,
" বাংলাদেশকে দখল করলে ভারতের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন হবে কিনা - তার পর্যালোচনা.... "
এরআগে আসি, ইংরেজ শাসনের পর্যালোচনায়..
১৭৫০ এর দিকে ইংরেজদের সাথে ফরাসি, ডাচ, পর্তুগীজ ও স্পেনীশদের বাণিজ্যযুদ্ধ চলছিলো।
ইংরেজদের প্রয়োজন ছিল বিনাশুল্কে শিল্পের কাঁচামাল ; যেমন : পাট, তুলা, নীল, চা, তেল, খাদ্যশস্য ইত্যাদি সংগ্রহ করে শিল্পজাতের মাধ্যমে এদেশসহ সারাবিশ্বে উৎপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা.....
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী যখন শুল্কমুক্ত অনুপ্রবেশ ও অধিক মুনাফা অর্জনে বাধা অনুভব করলো, ঠিক তখনি তারা এদেশকে দখল করে নিয়েছে।
জমির খাজনার প্রতি ইংরেজদের প্রধান নজর ছিল না। খাজনার ভাগ দিয়ে তারা এদেশীয় জমিদার -উচ্চবিত্তদের অনুগত করে রেখেছিল আর বাকিভাগ দিয়ে এদেশীয় আইন-আদালত, প্রশাসন, রেলওয়ে অবকাঠামো, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়তে ব্যয় করেছে।
এদেশ দখলে ইংরেজদের রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ মনোপলি , অর্থাৎ কেবল ইংরেজদেরই একচেটিয়া বাণিজ্যের সুযোগ ও শিল্পের কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং ফরাসিসহ অন্যান্য প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে থাকা
ভারতের কি এমন কোন রাজনৈতিক লক্ষ্য আছে?
সেভেন সিস্টারস এর অখন্ডতা :
বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাতটি প্রদেশ , এ সাতটি প্রদেশ ভারত পেয়েছে ব্রিটিশ ভারতীয় উত্তরাধিকার সূত্রে। ব্রিটিশদের পূর্বে এই সাতটি প্রদেশ কখনো ভারতের মূলধারার সঙ্গে মিশেনি। মৌর্য, গুপ্ত, সুলতানী, মুঘল কোন আমলেই সাতটি প্রদেশ কখনো পুরোপুরি ভারতীয় সংস্কৃতির মূলধারার সাথে মিশেনি।
এ সাতটি প্রদেশের অধিকাংশ মানুষ ভূট-তিব্বতীয় কিংবা মঙ্গোলয়েড উপজাতি। ধর্মে খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ নয়তো প্রকৃতিপূজারী। হিন্দি-বাংলা ভাষাভাষীরা এখানে সংখ্যালঘু
ব্রিটিশরা বুঝেছিল, এ অঞ্চলটি ভারতকে না দিয়ে গেলে, পুরো অঞ্চলটি চীনের পকেটে ঘুরে যাবে যা ইংরেজদের স্বার্থের সাথে বেশী সাংঘর্ষিক।
পঞ্চগড়-দার্জিলিং করিডোর বা চিকেন নেক ছাড়া সেভেন সিস্টারস এর সাথে ভারতের কোন ভৌগলিক সংযোগ নেই, না জলে না স্থলে....
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের ট্রানজিট ও ফেনী করিডোর দিয়ে চট্টগ্রাম-আগরতলা বন্দর ব্যবহার প্রয়োজন
ক. ভারত ইতিপূর্বে শুল্কমুক্ত ট্রানজিট পেয়েছে
খ. আগরতলা বিমানবন্দর করার জন্য জায়গা চেয়েছে
গ. সোনাদিয়ায় চীন প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প বন্ধ করেছে
ঘ. ভবিষ্যতে ভারত চট্টগ্রাম বন্দরকে অবাধ ব্যবহার করার সু্যোগ চাইবে
ঙ. ত্রিপুরার ইন্ডিজেনাস চাকমাদের দিয়ে ভারত পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পেয়ে গেলে সেভেন সিস্টারস সমুদ্রের রাস্তা পেয়ে যাবে
বাংলাদেশের বিশাল পণ্য ও কাঁচামালের বাজার :
ভারতীয় পণ্যের, পর্যটন-চিকিৎসা সেবার অন্যতম বাজার হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে রয়েছে ভারতীয়দের অবাধ বিনিয়োগ। প্রায় ১০ লক্ষ বৈধ-অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী বাংলাদেশে কর্মরত। বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম রেমিটেন্সের উৎস।
ভারত চায়, বাংলাদেশের ভেতরে যাতে ভারতীয় জঙ্গী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আশ্রয় ও অস্ত্র সাহায্য না পায়। চীনের সাপ্লাই করা দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার পরে ভারত এ বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছে। উলফার কমান্ডার অনুপ চেটিয়াকে গ্রেফতার করে ভারতের হাতে তুলে দিয়ে বাংলাদেশ ভারতের বিশ্বাস অর্জন করেছে
সবশেষে একটা কথা, বাংলাদেশ হায়াদ্রাবাদ বা সিকিমের মতো ব্রিটিশদের প্রিন্সলি স্টেট ছিল না। বাংলাদেশ ভূখন্ডের প্রায় ৭০ বছরের স্টাবলিশমেন্ট আছে। বাংলাদেশের নেপাল-ভূটানের মতো ল্যান্ড ব্লকেডও নয়। আবার কুয়েতের মতোও না যে, ইরাকের মতো এসে হুট করে দখল করে ফেলবে।
বাংলাদেশ হলো মানুষের খনি, তেলের খনি না।
বাংলাদেশে বরং ভারতের অনুগত জমিদারী বসাতে পারলে ভারতের রাজনৈতিক লক্ষ্য এমনিতেই অর্জন করা সম্ভব , ব্রিটিশ হিস্ট্রি তাই বলে...
সবশেষে একটা কথা, বাংলাদেশ হায়াদ্রাবাদ বা সিকিমের মতো ব্রিটিশদের প্রিন্সলি স্টেট ছিল না। বাংলাদেশ ভূখন্ডের প্রায় ৭০ বছরের স্টাবলিশমেন্ট আছে। বাংলাদেশের নেপাল-ভূটানের মতো ল্যান্ড ব্লকেডও নয়। আবার কুয়েতের মতোও না যে, ইরাকের মতো এসে হুট করে দখল করে ফেলবে।
বাংলাদেশ হলো মানুষের খনি, তেলের খনি না।
বাংলাদেশে বরং ভারতের অনুগত জমিদারী বসাতে পারলে ভারতের রাজনৈতিক লক্ষ্য এমনিতেই অর্জন করা সম্ভব , ব্রিটিশ হিস্ট্রি তাই বলে...... by shareare nayem
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন