সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কলম্বাসের বর্ণনা থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে রহস্যময় জলপরীর (mermaid) প্রমান পাওয়া গেছে, এই বিষয়ে আপনার মতামত কী?

 


9 জানুয়ারী ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর সবচেয়ে মহান অনুসন্ধানকারীর মধ্য একজন খ্রিস্টোফার কলম্বাস, তার ডাইরিতে Mermaid-র কথা উল্লেখ করেন, যা পুরো পৃথিবীকে হয়রান করে দিয়েছে।

কলম্বাস তার ডাইরিতে ভ্রমণের সমস্ত কাহিনী লিখতেন, কিন্তু তার মতে ৯ জানুয়ারী ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে (ডোমিনিকান রিপাবলিক থেকে ফেরার সময়) সাগরের মধ্য ৩ মার্মিডকে সাঁতার কাটতে দেখেছেন। তার বর্ণনা অনুসারে ৩ জীব জলের উপর ধীরে ধীরে সাঁতার কাটছে , তাদের নিচের শরীর মাছের লেজের মতো আর উপরে এক মানষের মতো। কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন যেমনটা ইতিহাস মার্মিডকে বর্ণনা (সুন্দরী মস্যকন্যা) করেছে এটা ঠিক তার বিপরীত, একদম দানবের মতো দেখতে। শরীর অনেক ভয়ানক। কলম্বাস এক মহান অনুসন্ধানকারী ছিলেন যিনি আমেরিকার মতন এক মহাদ্বীপের খোঁজ করেছেন। যার জন্য তার এই ডাইরির বর্ণনাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবে নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছেন কলোম্বাস হয়তো কিছু জীবকে দেখেছেন কিন্তু ওটা মার্মিড ছিল না, হয়তো জলের ভিতর বসবাসকারী ম্যামলস মন্টিস হতে পারে। মন্টিসের চোখ মানুষের মতো দেখতে, লেজ ঠিক মার্মিড-র মতো দেখতে জীবের মতো। যদি এই সামুদ্রিক জীবকে যদি দূর থেকে দেখা যায় তবে একে মার্মিড ভাবার ভুল হতে পারে।


বিভিন্ন কথা-উপকথা অনুসারে মার্মিড এক সামুদ্রিক জীব, যার উপরের শরীর এক মেয়ের আর নিচের শরীর এক মাছের। মার্মিডকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর ও ইন্ডিয়ান মহাসাগরে পাওয়ার দাবি করা হয়। বেশিরভাগ উপকথায় মার্মিডকে সুন্দর্যের প্রতীক বলা হয়েছে। আবার কিছু উপকথা একে দানবের মধ্য এক ভাবা হয়, যার মুখ দেখতে খুব বিতশ্রী ও ভয়ানক। বলা ওই মার্মিড জলের মধ্য পাথরের উপর বসে থাকে, আর নিজে নিজেকে জলের মধ্য দেখে, নিজেই নিজের প্রশংসা করতে থাকে। কিছু উপকথায় পুরুষ মার্মিডও উল্লেখ করা হয়েছে, জেক মারমান বলা হয় কিন্তু একে মার্মিদের মতো খুব সুন্দর বলা হয়নি বরং খুব ভয়ানক অসুন্দর দানব রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।


শুধু কলম্বাস একমাত্র ব্যাক্তি নন যিনি মার্মিডকে দেখার দাবি করেছেন। কলম্বাসের আগে ১৪৩০ খ্রিস্টাব্দে নেদারল্যান্ডের এডামে এক ভয়ঙ্কর সমুদ্রি তুফান সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছিলো। যার ফলে পুরো শহরকেই জলস্বাসের ধাক্কা সহ্য করতে হয়েছে। সেখানে কিছু ছেলে দাবি করেছিল, তারা মার্মিদের মতো একটি জীবকে সমুদ্রের তীরে মৃত অবস্থায় দেখেছে। যার শরীর পাথরের সাথে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে সম্পর্ণ খারাব হয়েছে।


বর্তমান পৃথিবীতে অনেকেই মার্মিদের অস্তিত্ব আছে বলে দাবি করেন, তাদের মতে মার্মিড দেখতে হয়তো এমনটা নয় যেমনটা ইতিহাস বর্ণনা করে। হতে পারে তাদের শরীরের উপরের অংশ মানুষ নয় কিন্তু মানুষের মতো দেখতে। কিছু মানুষ এরকম থিওরিও দেয় যে, সমুদ্রে বসবাসকারী ডলফিন এবং হুইলস মানুষের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বন্ধুত্ত্বপূর্ণ, কারণ সমুদ্দেরের মধ্য এই জীব নিশ্চই মার্মিডকে দেখে থাকবে যার কারণে সে মানুষকেও মার্মিড ভেবে ভুল করে।


বর্তমান সময় মার্মিডকে ঘিরে অনেক কথাই উঠে এসেছে। ইন্টারনেটে জনপ্রিয়তা অর্জন করার জন্য মানুষ অনেক মার্মিড সমন্দিও ফটো পোস্ট করে। তবে এর ৯০% ফটোই মিথ্যা প্রচার করে বাকি যে সত্য খবর পাওয়া যায় তা সত্যি ভয়নক কিছু।


২০০৯ খ্রিস্টাব্দে ইসরাইলের এক শহর কেলিয়েড এ এক মার্মিডকে দেখার দাবি করা হয়। আর এমন দাবি করার সংখ্যা প্রায় হাজারের উপরে হবে। এমনকি অন্য দেশের নাগরিক যারা ঘুরতে এসেছে তারাও মার্মিডকে দেখার দাবি করেছে। ইসরাইলের মানুষের বর্ণনা অনুসারে এই মার্মিডকে শুধু সূর্যস্তোর পর সন্ধ্যায় দেখা যায়। মার্মিড দেখার ঘটনা এতটাই বেড়ে গিয়েছিলো যে ইসরাইলের সরকার ঘোষণা করলো যে মার্মিদের একটি ফটো তুলতে পারবে তাকে ৭৪ লাখ টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু আজ পর্যুন্ত কেউ এই টাকা জিততে পারেনি।


২০১২ খ্রিস্টাব্দে জিম্বাবুয়ের কোকি শহরে এক বাঁধ বানানো শ্রমিকরা, বাঁধ বানানোর অর্ধেক কাজ করে আর কাজ করতে রাজি হয়নি। আধিকারিকদের অনেক চেষ্টার ফলেও তারা কাজে ফিরতে চায়নি। শ্রমিকরা বলে ওই নদীতে মার্মিড বসবাস করে, যারা বাঁধের কাজ বন্ধ করার জন্য শ্রমিকদের মারতেও পারে। বেশিরভাগ শ্রমিকই মার্মিডকে দেখেছে বলে দাবি করেছে। বাঁধের কাজ পুরা করার জন্য আলাদা শহর থেকে শ্রমিক নিয়ে আসা হলো কিন্তু তারাও ১ সপ্তাহ কাজ করার পর কাজ ছেড়ে দিলো। তারাও রাতের সময় ওই নদীতে এক মার্মিড এর মতো জীবকে দেখার দাবি করেছে। পরিবর্তিতে বিদেশ থেকে শ্রমিক দিয়ে কাজটা পুরা করেছে। তবে কাজটা শুধু দিনের বেলায় হয়েছে। বাঁধের কাজ সম্পর্ণ হয়েছে কিন্তু মার্মিদের আতঙ্ক আগের চেয়ে বেশি হয়েছে। অনেক মানুষ নদীর ধারে মার্মিদের হামলা করার দাবি করেছে। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে নদীর ধার থেকে দুটি ছেলের নিখুজ হয়ে যাবার ঘটনাও সামনে আসে।


ইন্দোনেশিয়ার কায় দ্বীপে জাপানের সেনাবাহিনীদের সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তাদের বর্ণনা অনুসারে দ্বীপের সাথে বালির চড়ে তারা এক মার্মিদের মৃত দেহ পেয়েছে। ওখানকার স্থানীয় লোক এই জীবটিকে দেখে বলে একে তারা ওরাংকিয়াং নাম জানে। ওরাংকিয়াং এর প্রচুর কাহানি ওই অঞ্চলের স্থানীয় লোকের মুখে মুখে আছে।


যদি বৈজ্ঞানিকভাবে দেখা হয়, বাস্তবেই কি মার্মিদের মতন জীব এই পৃথিবীতে আছে ? মহাসাগরের তলদেশে মানুষের মতন শরীর কখনোই জলের চাপ সহ্য করতে পারবে না। হয়তো তারা দেখতে সম্পর্ণ আলাদা যেমনটা বর্ণনা করা হয় তার চেয়ে সম্পর্ণ ভিন্ন যাকে কখনো খোঁজার চেষ্টাই করা হয়নি। মনে রাখবেন সাগরের মাত্র ৫% আমরা জানি, এখনো সাগরের অনেক জীব সম্পর্কেই আমরা জানিনা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি পদার্থের নাম কী এবং এটি কি কাজে ব্যবহৃত হয় ?

Periodic Tableএর শেষে যে পদার্থগুলো দেখতে পাওয়া যায়, তা সবগুলই দামি। এর কারণ হলো, ওই পদার্থগুলো মনুষ্য-তৈরি বা man-made। আবার ওগুলো তৈরি করতে যে পরিমান শ্রম, সময়, অর্থ ব্যয় করতে হয় সেই তুলনাই তারা অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এরা এতটাই ক্ষণস্থায়ী যে, রসায়নবিদরাই এদের উপর ভালো ভাবে পরিক্ষা নিরীক্ষা চালাতে পারে না। যা হোক। ওগুলো বাদ দিয়ে যদি বলেন যে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় এমন উপাদানগুলোর মাঝে সবচেয়ে দামি কোনটা, তাহলে নিঃসন্দেহে সেটা হবে  ফ্রান্সিয়াম(Francium)।  Periodic Table এর  Group 1, Period 7 এর 87 Atomic Number  বিশিষ্ট মৌলটি হলো ফ্রান্সিয়াম। প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া গেলেও এর স্থায়িত্ব এত কম যে এদের দাম  গ্রামপ্রতি ১০০ কোটি মার্কিন ডলার  নির্ধারণ করতেও কার্পণ্য করেনি বিজ্ঞানিরা। এটি তেজষ্ক্রিয়এবং এর অর্ধায়ুকাল কেবল ২২ মিনিট। এটি এতটাই ক্ষণস্থায়ী যে এটিকে কখনোই ১ গ্রাম পাওয়া যায়নি। এমনকি এটি কে তৈরি করেও না। ফ্রান্সিয়াম এত ক্ষণস্থায়ী হওয়ার দরুন ফ্রান্সিয়ামকে কোন কাজে লাগানো হয় না। এখন যদি বলেন, ভাই, এমন কোন পদার্থ এর নাম বলুন যা ক্ষণস্থায়ী নয়, যা আপনি আমি সবাই দেখতে...

জীবনের পাঠ মানুষ খুব দেরিতে শেখে || jiboner part manus khob dare te sekhe

জীবনের পাঠ মানুষ খুব দেরিতে শেখে আমাদের জীবনে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যা আমাদেরকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয় এবং আমাদের ব্যক্তিত্বকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দেয়। ঠিক তেমনি কিছু জিনিস আছে যা আমরা সময়মতো শিখি না, এবং যখন আমরা বুঝতে পারি, সময় চলে গেছে এবং আমরা অনেক কষ্ট পাই। এখানে আমরা এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি যেগুলো যদি সময়মতো শেখা যায় তাহলে আমাদেরকে কষ্ট থেকে বাঁচাতে পারে। 1- সবকিছুই অস্থায়ী আপনাকে প্রথম যে জিনিসটি শিখতে হবে তা হল যে ব্যক্তিত্ব বা আশীর্বাদ আপনার জীবনে স্থায়ী নয়। যখন আপনি এটি বুঝতে পারেন, আপনি মানুষকে আপনার জীবনে থাকতে বাধ্য করা বন্ধ করেন এবং যে ব্যক্তিকে ছেড়ে যেতে চায় তাকে ছেড়ে চলে যান, আপনি আর কোনো সম্পর্ককে জোর করবেন না। এটি আপনাকে মানসিকভাবে খুব শক্তিশালী করে তোলে কারণ আপনি যখন মানুষকে আপনার জীবনে থাকতে বাধ্য করা বন্ধ করেন তখন অন্য কেউ আপনাকে সুখী বা দুঃখ দিতে পারে না। তুমি তোমার সুখ দুঃখের একমাত্র কারণ হয়ে যাও। সংক্ষেপে, আপনি একজন অটোফাইল হয়ে যান। 2- জীবন ন্যায্য নয় দ্বিতীয়ত, আপনাকে শোষণ করতে হবে যে কাউকে একটি নিখুঁত জীবন দেওয়া হয় না, আপন...